ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

সাতকানিয়ায় ডাক্তারকে ‘ক্ষমতা’ দেখানো সেই ইউএনওকে সরানো হল

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
লকডাউন ‘অমান্য করার’ অভিযোগে রোগী দেখতে যাওয়া এক চিকিৎসককে হেনস্থা করে জরিমানা করা সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলামকেকে ওএসডি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাকে সাতকানিয়া থেকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব স্বাক্ষরিত এক আদেশে সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। একই আদেশে হবিগঞ্জের ইউএনও ফাতেমা তুজ জোহরাকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।

রোববার (৪ জুলাই) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান।

গত শুক্রবার বিকেলে সাতকানিয়া পৌরসভা এলাকায় ডা. ফরহাদ কবির নামের এক চিকিৎসককে সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউএনও নজরুল ইসলাম। চিকিৎসকরা চলমান বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকলেও সেই অপরাধে জরিমানার শিকার হওয়া ডা. ফরহাদ বিষয়টি ইউএনওকে স্মরণ করিয়ে দেয়ায় তার উপর আরও ক্ষেপে গিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকিও দেন তিনি।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর ইউএনওর এমন কাণ্ডে চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। চিকিৎসক হয়রানির অভিযোগ এনে এর সুরাহা পেতে জেলা সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপের দাবিও তোলেন চিকিৎসক নেতারা। এসবের মধ্যেই হঠাৎ ওএসডি হলেন সাতকানিয়ার ইউএনও।

এই বিষয়ে কথা বলতে সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জরিমানার শিকার হওয়া সাতকানিয়ার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সোনাকানিয়া ছড়ারকুলের বাসিন্দা ডা. ফরহাদ কবির ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, ‘আমি পৌরসভার নাছির ফার্মেসি ও মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করি। ঘটনার দিন আমি চেম্বার শেষ করে ফিরছিলাম। ওই সময় একজন ইমার্জেন্সি রোগী আসার বিষয়ে ফোন পেয়ে মাঝপথ থেকে আবার চেম্বারে যাচ্ছিলাম। তখন সাতকানিয়া পৌরসভার কলেজ রোডের মুখে ইউএনও সাহেবের সাথে দেখা হয়। এসময় ইউএনও’র সাথে থাকা লোকজন সিগন্যাল দিলে আমি মোটরসাইকেল থামিয়ে আমার পরিচয় দিই।’

ডা. ফরহাদ কবির বলেন, ‘ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পর ইউএনও কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে যা ইচ্ছা তাই বললেন। এরপর ইউএনওর সাথে থাকা এক লোক আমার কাছ থেকে মোটরসাইকেলের চাবিটি নিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে ইউএনও জানান, আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকডাউনে বের হয়েছেন এজন্য। তখন আমি উনাকে ডাক্তারদের চেম্বারে যাওয়া আসায় বিধি নিষেধ না থাকার বিষয়ে বলি। এতে আরো বেশি রেগে যান ইউএনও। তিনি বলেন, আমি চাইলে আপনাকে জেল দিতে পারি। তা করলাম না, এক হাজার টাকা জরিমানা দেন।’

ডা. ফরহাদ কবির আরও বলেন, ‘অনেক লোকের সামনে তিনি ডাক্তারদের সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এক পর্যায়ে মামলা লিখে আমার হাতে দিয়ে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। তখন আমি টাকা দিয়ে দিই। এরপর ইউএনওর সাথে থাকা লোকদের বলেন, ছবি উঠান, ডাক্তারকে যে জরিমানা করছি এটা পত্রিকায় দিতে হবে। পরে অনেকে মুঠোফোনে আমার ছবি তুলেছেন। জীবনে আমি কোনদিন এ ধরনের অপমান বোধ করিনি। আমি বুঝতে পারছি না একজন ইউএনও কিভাবে এমন খারাপ আচরণ করতে পারেন?’

এদিকে ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উনি যে ডাক্তার সেটা তো আমি বুঝতে পারিনি। উনার সাথে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং হেলমেট ছিল না। তিনি যে অন্যায় করেছেন সেটা নিজে বুঝতে পেরেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, আমার অন্যায় হয়েছে। আমাকে শাস্তি দেন। পরে আমি এক হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আইন সবার জন্য সমান। সরকার আইন করেছে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি চাইলে আপিল করতে পারেন। মূলত সন্ধ্যা ৭ টার পর পাওয়াতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকায় জরিমানা করা হয়েছে।’

ডাক্তার পেয়ে ‘ক্ষমতার জোর’ দেখালেন সাতকানিয়ার ইউএনও, অশোভন আচরণ

ইউএনও ডাক্তারের সাথে পরিচয়পত্র না থাকার কথা বললেও মামলায় ডাক্তার ফরহাদ কবির লেখা হয়েছে। মোটরযান আইনে মামলা দেওয়ার কথা বললেও মামলায় অপরাধ হিসেবে দন্ডবিধি ২৭০ ও ২৭১ উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ধারায় বিদ্বেষপূর্ণ কর্ম, যা দ্বারা জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সঙ্গরোধ সংক্রান্ত নিয়ম অমান্য করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

পাঠকের মতামত: